আদালত ২৬৮ জন শিশু-কিশোরকে বাড়িতে থেকে সংশোধনের সুযোগ দিয়েছিলেন। তারা ভাল কাজের কথা ডায়েরিতে লিখে রাখছে । সংশোধনাগারে পাঠানোর বদলে কিশোরদের জাতীয় পতাকা , ডায়েরি , বই ও ফুল দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয় । শর্ত ছিল ভালো কাজ করতে হবে , বই পড়তে হবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে হবে । দ্য প্রবেশন অফ অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স ১৯৬০ এর আওতায় দেওয়া এ ধরনের আদেশ পরিচিতি পায় ব্যাতিক্রমী রায় হিসেবে ।
উল্লেখ্য, এই আইন অনুযায়ী , আগে দণ্ডিত হওয়ার কোন প্রমাণ না থাকা এবং অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় কোন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে আদালত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে শর্তসাপেক্ষে বাড়িতে থেকে সংশোধনের সুযোগ (প্রবেশন) দিতে পারে । এক্ষেত্রে অপরাধীর বয়স চরিত্র শারীরিক ও মানসিক অবস্থা , অপরাধের প্রকৃতি বা অপরাধ সংঘটনে তার সংশ্লিষ্ট বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে।
ব্যতিক্রমী রায় এর মাধ্যমে এক কিশোরকে বাড়িতে থেকে সংশোধনের সুযোগ দিয়েছিলেন সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোঃ জাকির হোসেন , নদীর তীরে বালু রাখা নিয়ে গ্রামের মারামারির একটি মামলায় কিশোরটিকে আইন এর সংস্পর্শে আনা হয়েছিল । কিশোরটি আদালতের আদেশে কি কি ভালো কাজ করছে তা ডায়রিতে লিখে রাখছে ।
৬২ শিশু মুক্ত : আদালতের প্রশাসনিক শাখার তথ্য অনুযায়ী , এ পর্যন্ত একান্নটি মামলায় ৬২ শিশু কিশোর আদালতের শর্ত মেনেই মামলা থেকে মুক্ত হয়েছে । অন্যদের অপেক্ষাকাল (প্রবেশন) চলমান । শর্ত পালনে ব্যর্থ হওয়ায় ৭ জন কিশোরকে গাজীপুরের কিশোর সংশোধনাগারে যেতে হয়েছে । সুনামগঞ্জ শিশু আদালতের বিচারক মামলার রায়ে যেসব শর্তের কথা উল্লেখ করেছেন, সেগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে বাবা-মার সেবা-যত্ন করা , ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা , অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করা , মাদক মুক্ত থাকা , মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই পড়া , গাছ লাগানো ও পরিচর্যা করা এবং নতুন করে আর অপরাধ না করা। আদালতের শর্তগুলো শিশুদের ঠিকভাবে পালনের বিষয়টি তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব সুনামগঞ্জ জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ শফিউর রহমানের। তিনি বলেন , তিনি সরেজমিনে গিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে মুঠোফোনে খোঁজখবর নেন । তিনি আরো বলেন আমরা তত্ত্বাবধান করছি । পাশাপাশি অভিভাবকদেরও দায়িত্ব রয়েছে এসব শর্তপালনে শিশুদের সহযোগিতা করা পাশে থাকা । অনেক অভিভাবকই সেটা করছেন।
শিশু-কিশোরদের এভাবে জেলে না পাঠিয়ে বাড়িতে থেকে সংশোধনের সুযোগ দেয়া হয় তাহলে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে । ছোট অপরাধে শিশু-কিশোরদের কারাগারে আটক রাখা হলে তাদের মানসিক শারীরিক এবং বুদ্ধির বিকাশের ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হতে পারে । আমাদের দেশে প্রচলিত শাস্তির নিয়ম হলো কারাবরণ করা। এ নিয়ম এর বাইরে এসে ব্যতিক্রম এ রায় আইন চর্চার পাশাপাশি সমাজে ব্যাপক সুফল বয়ে আনবে বলে আমরা মনে করি ।
তথ্যসুত্রঃ প্রথম আলো
তথ্য সংগ্রহেঃ তৈয়ব আলী, আইন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।