সাধারণ আলোচনাঃ হিন্দু শাস্ত্রীয় বা বিধিবদ্ধ আইনে নারীর সম্পত্তি ও স্ত্রীধন নিয়ে বিশদ আলোচনা আছে। তাই নারীর সম্পত্তি ও স্ত্রীধন সম্পর্কে ভালোভাবে জানার প্রয়োজন রয়েছে কেননা এই বিষয়গুলো জানা না থাকলে অনেক সময় নানান ভোগান্তিতে পরতে হয়। নারীরা দুই ধরনের সম্পত্তির অধিকারী হয়ে থাকে।
প্রথমত, নারী কোন সম্পত্তিতে পূর্ন অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। তার ইচ্ছানুসারে সেই সম্পত্তি বিক্রি,উইল, বা যেকোনো কিছু করতে। এই ধরনের সম্পত্তিতে নারীর সম্পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত থাকে।
দ্বিতীয়ত, নারী কোন সম্পত্তি পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। অর্থাৎ সে সেসকল সম্পত্তি তার ইচ্ছানুসারে বিক্রি বা উইল করতে পারেনা৷
নারীর সম্পত্তি(Women’s Property): নারী কোন সম্পত্তি পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। অর্থাৎ সে সেসকল সম্পত্তি তার ইচ্ছানুসারে বিক্রি বা উইল করতে পারেনা৷ এই ধরনের সম্পত্তিকে বলা হয় নারীর সম্পত্তি (Woman’s estate)। হিন্দু শাস্ত্র মতে পাঁচ ধরনের মহিলা “নারীর সম্পত্তির ” অধিকার পায়। তারা হলেন – বিধবা স্ত্রী, কন্যা, মাতা, পিতামহী, প্রপিতামহী। এই পাঁচজন উত্তরাধিকার মৃতব্যক্তি কর্তৃক যেকোন সম্পদ উত্তরাধিকার রূপে পাক না তা ” নারীর সম্পত্তি” হিসেবে গণ্য হবে। অর্থাৎ কোন হিন্দু নারী যদি কোন সম্পত্তি উত্তরাধিকার হিসেবে পায় তাহলে সেই সম্পদ তার ইচ্ছানুসারে ব্যবহার করতে পারবে না তবে কিছু বৈধকারন রয়েছে যেইগুলোর মাধ্যমে একজন হিন্দু মহিলা তার ” নারীর সম্পত্তি ” বিক্রি করতে পারবে, উইল করতে পারবে, ভোগ দখল করতে পারবে৷ তবে কারনগুলো অবশ্যই আইনসঙ্গত হতে হবে। আর একটি বিষয় জানা প্রয়োজন হিন্দু নারীদের ” নারীর সম্পত্তি” তে শুধুমাত্র সে জীবিত থাকা অবস্থাতেই অধিকার সৃষ্টি করতে পারে। অর্থাৎ হিন্দু নারীর মৃত্যুর পর পুনরায় সেই সম্পত্তি যার কাছ থেকে প্রাপ্ত হয়েছে তার উত্তরাধিনকারদের কাছে চলে যাবে৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়ঃ- লক্ষণ তার স্ত্রী প্রমা ও দুই ভাইকে রেখে মারা যায় এবং প্রমা তার স্বামীর সম্পত্তি উত্তরাধিকার হিসেবে পায় এবং একসময় সেও মারা যায় তখন তার সম্পত্তি আবার তার স্বামীর দুই ভাই উত্তরাধিকার হিসেবে পাবে।
নিম্নলিখিত কারণগুলো নারীর সম্পত্তি ব্যবহারের ক্ষেতে আইনসঙ্গত হিসেবে ধরা হয়ঃ
১. যার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি অর্জিত হয়েছে তার সৎকার করার জন্য অথবা তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য ব্যয়।
২.মৃতব্যক্তি কোন ঋণ রেখে গেলে অথবা ঋণগ্রস্ত অবস্থায় মারা গেলে তার ঋণ পরিশোধ করতে যা ব্যয় হবে তার জন্য স্ত্রী তার নারীর সম্পত্তি বিক্রি করতে পারবে।
৩. মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে কোন কাজ করতে যা ব্যয়।
৪.মৃত ব্যক্তি যাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ক্রিয়া করত যেমনঃ তার বাবা-মা তাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যে ব্যয় হবে।
৫. মৃত ব্যক্তি কোন সন্তান রেখে গেলে তাদের খরচ অথবা তাদের বিবাহ বাবত খরচ।
৬. বিবাহ উপলক্ষ্যে কন্যা জামাতাকে পরিবারের মর্জাদা অনুযায়ী যৌতুকাদি বাবত ব্যয়।
৭.মৃত ব্যক্তি ব্যবসা রেখে গেলে ব্যবসা চালু রাখার জন্য যে ব্যয় তবে শর্ত থাকে যে নারীর সম্পত্তি দিয়ে নতুন কোন ব্যবসা শুরু করা যাবে না।
৮. মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি রক্ষার্থে খরচাদি যেমনঃ মৃত ব্যক্তি যদি একটা একতলা বাড়ি রেখে যায় সেটাকে মেরামত করার প্রয়োজন হয় তাহলে নারীর সম্পত্তি বিক্রিয় করে তা করা যাবে তবে একতলাকে দুইতলা করার উদ্দেশ্যে খরচ করলে তা কার্যকর হবে না।
তবে, নারীর সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত আয় বা মুনাফা হিন্দু নারী তার ইচ্ছেমতো করতে পারে কিন্তু যদি সেই প্রাপ্ত আয় থেকে নতুন কোন সম্পত্তি অথবা ব্যাংকে জমা রাখলে সেই সম্পত্তিও নারীর সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে। এবং উত্তরাধিকারদের নিকট চলে যাবে৷ আবার বৈধ কারণ ব্যতীত কোন নারী যদি নারীর সম্পত্তি বিক্রি করে তাহলে ক্রেতা সেই সম্পত্তি উক্ত নারী জীবিত থাকা অবস্থায় ই ভোগ করতে পারবেন। নারীর মৃত্যুর পরে উত্তরাধিকাররা মামলা করলে সেই বিক্রি করা সম্পত্তি উত্তরাধিকারদের কাছে চলে যাবে। তাই নারীর সম্পত্তি ক্রয় করার আগে দেখতে হবে যে কি কারণে সম্পত্তি বিক্রি করা হচ্ছে কারণ যদি বৈধ হয় তাহলে ক্রেতার আর কোন সমস্যা নেই।
নারীর সম্পত্তি বিক্রি করার সময় ক্রেতাকে অবশ্যই ভাবী উত্তরাধিকারদের সম্মতি নিয়ে ক্রয় করতে হবে। কারণ যদি ওয়ারিশগণ অনুমতি প্রধান করে তাহলে বুঝতে হবে বিক্রি করার পিছনে বৈধ বা আইনসঙ্গত কারন কারন রয়েছে।
স্ত্রীধন(Stridhan): নারী কোন সম্পত্তিতে পূর্ন অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। তার ইচ্ছানুসারে সেই সম্পত্তি বিক্রি,উইল, বা যেকোনো কিছু করতে। এই ধরনের সম্পত্তিতে নারীর সম্পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত থাকে। অর্থাৎ স্ত্রীধন বিক্রি বা উইল করার সময় কারো অনুমতি বা সম্মতি নেওয়ার প্রয়োজন নাই।
স্ত্রীধনের বর্তমান প্রকৃতি (The Nature of Stridhan); একজন মহিলা কুমারী থাকা উত্তরাধিকার সূত্র ছাড়া অন্য যে কোন উপায়ে কোন সম্পত্তি পেয়ে থাকলে সেই সম্পত্তি স্ত্রীধন হিসেবে গণ্য হবে। অর্থাৎ এই সম্পত্তি তার ইচ্ছানুসারে উইল করতে পারবে বা বিক্রি করতে পারবে অথবা নতুন কোন ব্যবসা শুরু করে কোটিপতি হইলেও সেই সম্পত্তিতে কারো অধিকার থাকবেনা।
স্ত্রীধন দ্বারা অর্জিত সম্পত্তি ও স্ত্রীধন হিসেবে গণ্য হবে। একটু আগেই বললাম স্ত্রীধন দিয়ে নতুন কোন ব্যবসা শুরু করে কোটিপতি হইলেও সেই সম্পত্তিতে কারো অধিকার থাকবেনা। অর্থাৎ ব্যবসা থেকে যা আয় হয়েছে তার সবটুকুই স্ত্রীধন হিসেবে গণ্য হবে।
একজন মহিলা বিবাহিত থাকা অবস্থায় উত্তরাধিকার ব্যতীয় কোন সম্পত্তি পাইলে সেটাও স্ত্রীধন হিসেবে গণ্য হয় তবে স্বামীর জীবদ্দশায় তা খরচ করতে হলে স্বামীর অনুমতি নিতে হবে তবে স্বামীর মৃত্যুর পরে তার ইচ্ছানুসারে ব্যবহার করতে পারবে।
অর্থাৎ , কোন মহিলা উত্তরাধিকার ব্যতীত কোন সম্পত্তি পেলে সেই সম্পত্তি স্ত্রীধন আর স্ত্রীধন থেকে অর্জিত সম্পত্তিও স্ত্রীধন।
লেখকঃ শরিফুল ইসলাম
আইন বিভাগ (৪৪তম ব্যাচ)
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
Comments are closed.