একটি মামলা পরিচালনা করতে মোটামুটি সবারই একটা স্বার্থ রক্ষা হয় শুধুমাত্র সাক্ষী ছাড়া।বাদী ও বিবাদী ,বিচারপতি ও আইনজীবী সবাই মূল্যায়িত হয় শুধুমাত্র সাক্ষী ছাড়া।বেচারা সাক্ষী সে কি পায়?
আইনবিশেষজ্ঞদের মতে ফৌজদারি মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণের প্রধান নিয়ামক হচ্ছে সাক্ষী। সেই জায়গায় সাক্ষী আসে না আদালতে।
সাক্ষী না আসার কারণ:
অভিজ্ঞতা বলে নিম্নোক্ত কারণে আদালতে সাক্ষীরা আসতে চায় না-
1.সাক্ষী ছাড়া অন্যদের স্বার্থ থাকে সেখানে সাক্ষী মনে করে কয়েকদিন পর পর আদালতে আসা-যাওয়া তাদের মূল্যবান সময়ের
অপচয়।
2.আদালতে আসা-যাওয়ার যে পরিবহণ খরচ বেশিরভাগ সময় সাক্ষী নিজেই দেয়।এতে করে অনেক লোক আদালত পাড়ায় না আসার অনীহা দেখায়।
3.অনেকক্ষেত্রেই,পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি সাক্ষী হয়ে থাকেন ফলে কয়েকদিন পর পর আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসলে ঐ দিনটাতে পরিবারের অন্য সদস্যদের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
4.আদালত পাড়ার পরিবেশে অনেকে অস্বস্তি ফিল করে ।
5.অনেক সময় প্রভাবশালী অথবা রাজনৈতিক ক্ষমতা ধর ব্যক্তির বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্য দিতে আসে না।
এ সম্পর্কিত কয়েকটি মামলা দেখে নেই:
July 28 2022 দেশরুপান্তরের এক প্রতিবেদনে উঠে আসে যে, 18 july 2012 সালে সাভারের আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় ধর্ষণের শিকার হয়েছিলোএক 16 বছরের কিশোরী।সে স্হানীয় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতো।এটার তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় ওই বছরের 15 ই নভেম্বর।সাক্ষী করা হয়েছিলো 8 জনকে।বিচার শুরুর আদেশ দেওয়া হয়েছিলো 2013 সালের 10 March।কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল এই যে 9 বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে আসে নাই।
আরেকটি মামলা যদি দেখি,Jun 4 ,2022 প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে 12 বছর আগে চট্টগ্রাম নগরের খুলশী VIP Housing area তে পাহাড় কেটে প্লট তৈরি করায় পরিবেশ অধিদপ্তর একটি মামলা করে আজ পর্যন্ত যার নিষ্পত্তি হয় নাই।এর মূলে রয়েছে সাক্ষী দের সাক্ষ্য দিতে না আসা।এই মামলায় 12 জন সাক্ষী ছিলো অথচ এক যুগ পেরিয়ে গেলেও কেউ আসে না সাক্ষ্য দিতে।
সাক্ষী না আসায় আদালতে প্রভাব:
যেহেতু সাক্ষী একটি মামলা নিষ্পত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সুতরাং তাকে আদালতে উপস্থিত করানো কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।প্রসিকিউশন অথবা পুলিশ আদালতে সাক্ষীদের উপস্থিত করাবে।কিন্তু প্রায়ই আদালত পাড়ায় শোনা যায় সাক্ষী ফেরারি আছে,সাক্ষ্য দিতে আসে না,অনীহা দেখায় ইত্যাদি ইত্যাদি ।কিন্তু তাদের না আসার ফলে বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা হয়,মামলা মুলতবি করা হয়,মামলারজট সৃষ্টি হয়।এছাড়া যেখানে সাক্ষীই নাই সেখানে তো অপরাধীদের দৌরাত্ব তো বাড়বেই।
কি কি ব্যবস্থা নিলে সাক্ষী আসতে পারে:
1.নিরাপত্তা দিতে হবে ঐ সাক্ষী কে এবং যেকোনো প্রকার চাপমুক্ত রাখতে হবে।
2.তাদের যাতায়াত ব্যবস্থা সরকারি বা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে করা যেতে পারে।
3.পুলিশকে যথাযথভাবে সমন পাঠানো উচিত।
4.তাদেরকে আদালত পাড়ায় শ্রদ্ধা ও সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা উচিত যেনো তারা স্বস্তি অনুভব করে।
- মামলা দ্রুতসম্ভব নিষ্পত্তি করা যেনো বারবার সাক্ষীদের আদালত পাড়ায় আসতে না হয়।
উপরিউক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় আনলে সাক্ষীদের অনুপস্থিতি কমানো যেতে পারে বলে মনে হয়।
মো: পলাশ মিয়া
আইন বিভাগ,
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
Comments are closed.