আর নয় শিশুশ্রম, উন্মুক্ত হোক তাদের পথচলা

No more child Labour
Share the content

প্রারম্ভিকাঃ আজকের শিশুরাই আগামী দিনের কর্ণধার। আজ যারা শিশু আগামী দিনে তাদের উপর ন‍্যস্ত হবে দেশ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব। কিন্তু নানা কারণে শিশুরা আজ উপযুক্ত পরিচর্যা থেকে বঞ্চিত। জীবিকার প্রয়োজন এ তারা বাধ‍্য হচ্ছে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে।

শিশুশ্রম আমাদের সমাজে এক অঘোষিত মহামারী। যার থেকে রেহায় পাচ্ছেনা সমাজের কোমলমতি ফুটফুটে শিশুরা। এই মহামারীর দায়বদ্ধতা সমাজের সকলের। এটি একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিনত হয়েছে। যা ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সী ৪.৭ মিলিয়ন সন্তানের দ্বারা জোরপূর্বক করিয়ে নেওয়া হয়। সারাবিশ্বে প্রায় ১৫ কোটিরও বেশি সংখ্যক শিশু শিশুশ্রমের শিকার।

যার ফলে শিশুদের শারিরীক ক্ষতি হচ্ছে,শৈশব বিনষ্ট হচ্ছে,ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে। এই সমস্যা মূল কারন হলো দারিদ্রতা। আর বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি এই সমস্যাকে আরো জটিল করে দিয়েছে। দুর্মূল্যের বাজারে এক কেজি চাল কিনতেও গুনতে হচ্ছে অর্ধশত টাকা। চরম দারিদ্রে কবলিত হওয়ার পরই বাবা মা তাদের শিশুদের কাজে পাঠাতে বাধ্য হয়।

বিভিন্ন দেশে শিশুশ্রমঃ

১৮৩৯ সালে ব্রিটেন তার কারখানা আইন প্রণয়ন করে যা শিশুশ্রমকে সীমিত করে এবং ১৮৪১ সালে ফ্রান্স তার প্রথম শিশুশ্রম আইন গ্রহণ করে। ১৮৯০ সালের মধ্যে প্রায় সমগ্র ইউরোপে শিশুশ্রম আইন ছিল। যদিও স্বতন্ত্র অঙ্গরাজ্যগুলি ১৮৪৪ সালে ম্যাসাচুসেটস থেকে শুরু করে আইন গ্রহণ করেছিল, ১৯৩৮ সালে ফেয়ার লেবার স্ট্যান্ডার্ডস আইন পাস না হওয়া পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফেডারেল আইন প্রণয়ন করেনি। এই আইনে ন্যূনতম মজুরি ঘণ্টায় ৪০-সেন্ট করা হয়, শিশু কাজ সপ্তাহে ৪০ ঘন্টায় সীমিত করা হয় এবং ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের উৎপাদন কারখানা ও খনিতে কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে। ১৯৪১ সালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট আদেশ দেয় যে, আইনটি সাংবিধানিক।

শিশু সংক্রান্ত কতিপয় চুক্তির ব্যাপারে বাধা-নিষেধঃ

বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ ধারা-৩৫, এই অধ্যায়ের বিধান সাপেক্ষে, কোন শিশুর মাতা-পিতা বা অভিভাবক শিশুকে কোন কাজে নিয়োগের অনুমতি প্রদান করিয়া কাহারও সহিত কোন চুক্তি করিতে পারিবেন না৷

ব্যাখ্যাঃ এই ধারায় “অভিভাবক” বলিতে শিশুর আইনগত হেফাজতকারী বা শিশুর উপর কর্তৃত্ব আছে এমন যে কোন ব্যক্তিকেও বুঝাইবে৷

শ্রম আইন, ২০০৬ অনুযায়ী শিশুদের নিয়োগ নিষিদ্ধ এবং কোন কারখানায় তাদের কে নিয়োগ করার ক্ষেত্রে যোগ্যতা সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়। শিশু বলতে তার বয়স চৌদ্দ বছর সম্পন্ন হয়েছে এবং কিশোর বলতে ষোল বছর সম্পন্ন হয়েছে কিন্তু সে ১৮ বছরের নিচে এমন ব্য্যক্তি কে বোঝায়।

ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে, কোন শিশু বার বছর সম্পন্ন করেছে এমন শিশু কে হালকা কাজে নিয়োজিত করা যাবে যেখানে শিশুটির শারীরিক স্বাস্থ্য এবং উন্নয়নে বা মানসিক বিকাশে কোন প্রকার ব্যাঘাত ঘটাবে না। এই ধরনের শিশুদের কাজের সময় এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে করে তাদের স্কুলের উপস্থিতির কোন সমস্যা না হয়। (শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ৩৪-৩৮ ও ৪৪, সংশোধিত ২০১৩)

  • বিপজ্জনক কাজের জন্য নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর।

  • ১৬ বছরের উপরে এবং ১৮ বছরের নিচে শ্রমিকদেরকে কোন প্রতিষ্ঠানে যন্ত্রপাতি চালু অবস্থায় পরিষ্কারের জন্য, তেল প্রদানের জন্য বা তাকে সুবিন্যস্ত করার জন্য বা সেই যন্ত্রের চলমান অংশগুলোর মাঝে বা স্থির এবং চালু অংশের মাঝে কাজ করার অনুমতি দেওয়া যাবে না।

  • কোন কিশোর এমন কোন যন্ত্রের কাজ করবে না যদি না সে উক্ত যন্ত্রপাতি সংক্রান্ত বিপদ সম্পর্কে এবং এই ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভাবে অবগত থাকে অথবা সেই যন্ত্রতে কাজ করার ব্যাপারে সে যথেষ্ট প্রশিক্ষন গ্রহন করেছে বা সেই যন্ত্র সংক্রান্ত অভিজ্ঞ এবং পুরোপুরি জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তির তত্তাবধানে কাজ করে।

  • একজন কিশোর শ্রমিক কোন কারখানা বা খনিক্ষেত্রে দিনে ৫ ঘণ্টা এবং সপ্তাহে ৩৩ অধিক কাজ করতে পারবে না এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে দিনে ৭ ঘণ্টা এবং সপ্তাহে ৪৫ ঘণ্টার অধিক কাজ করতে পারবে না।

  • কোন কিশোর শ্রমিককে কোন প্রতিষ্ঠানে সন্ধ্যা ৭টা হতে সকাল ৭টার মধ্যে কাজ করতে দেওয়া যাবে না।

  • কোন কিশোর শ্রমিককে ভূগর্ভে বা পানির নিচে বা অন্য বিপজ্জনক কাজে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।

২০১২ সালে সরকার শিশুদের জন্য নিষিদ্ধ কাজের একটি তালিকা তৈরি করে, তবে এটি এখন অনুমোদিত হয়নি। এই তালিকাতে জাহাজ ভাঙ্গা, চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরন, নির্মাণকাজ এবং মোটরকারখানাতে কাজ সহ ৩৬টি পেশার কথা বলা হয়েছে।

ইতিমধ্যে, একটি নতুন আইন অনুমোদন করা হয়েছে (শিশু আইন ২০১৩) যা শুধু শিশুদের কাজের জন্য আইনগত বয়স স্থির করে না বরং যদি কর্মসংস্থানে শিশু শোষিত (একটি শিশুর জীবন এবং উপার্জনকে জব্দ করার মাধ্যমে) হয় তাহলে কঠোর শাস্তিও নির্ধারণ করে যা হল দুই বছর কারাদণ্ড থেকে শুরু করে ৫০,০০০টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয়ই হয়ে থাকে। যদি কোন ব্যক্তি বিশেষ লাভ ভোগের জন্য কোন শিশুর কর্মসংস্থান করে বা অনৈতিক বিনোদনের জন্য কোন শিশুকে ব্যবহার করে তবে তাকে সেই দোষের পোষক হিসেবে ধরা হবে।

(শিশু আইন ২০১৩ এর ধারা ৮০, শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ৩৯-৪২, সংশোধিত ২০১৩)

শেষকথাঃ র্সবোপরি, অর্থনৈতিক সংকট লাখ লাখ শিশুদের শিশুশ্রমের দিকে ঠেলে দিয়েছে। শিশুশ্রম নিরসনে দারিদ্র্যতা লাঘব করা জরুরি। এই দায়বদ্ধতা শুধু সরকারের নয় বরং সমাজের সকলের। শুধু সরকারি উদ্যোগ এ সমস্যা পুরোপুরি সমাধান করতে অপারক। UNICEF এটি নিয়ে অনেক আগে থেকেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু তারাও এখন পর্যন্ত পুরোপুরি সফলতা পায়নি। তার প্রধান কারন হলো জনসচেতনতার অভাব। জনসচেতনতা এবং দারিদ্র্য বিমোচন ছাড়া এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় । আর যেহেতু এ দায়িত্ব আমাদের সকলের তাই আমাদের সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে এবং ফিরিয়ে দিতে হবে তাদের সুন্দর, সাফল্যমন্ডিত ভবিষ্যৎ। মানবতার বিকাশ এবং জাতির বৃহত্তম স্বার্থে শিশুশ্রম রোধ করা আবশ্যক।

শিশুশ্রম আর নয়, জয় হোক শিশুদের;

সংকটে দূর্যোগে যাই হোক, বন্ধ হোক শিশুশ্রম;

শিশুশ্রম আর নয়, শিশুদের জীবন হোক স্বপ্নময়।

Written by- BDLRP Team of State University of Bangladesh.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *